ঋণ পরিশোধে অতিরিক্ত দেওয়া যাবে কি?
কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে স্পষ্ট দিকনির্দেশনা
ইসলাম ও ঋণের নীতিমালা
ইসলামে ঋণ পরিশোধ একটি দায়িত্ব এবং আমানত। অনেকে জানতে চান—
ঋণ পরিশোধের সময় ইচ্ছাকৃতভাবে অতিরিক্ত কিছু দেওয়া যাবে কি?
এই প্রশ্নের উত্তর সহীহ হাদীস দ্বারা সুস্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
অতিরিক্ত দেওয়া কখন বৈধ?
যদি নিচের শর্তগুলো পূরণ হয়, তাহলে অতিরিক্ত দেওয়া বৈধ:
-
ঋণ দেওয়ার সময় কোনো শর্ত না থাকে
-
ঋণদাতার পক্ষ থেকে কোনো দাবি বা চাপ না থাকে
-
অতিরিক্ত দেওয়ার সামাজিক চর্চা বা প্রচলন না থাকে
-
ঋণগ্রহীতা স্বেচ্ছায় ও ভালোবাসা থেকে অতিরিক্ত দেয়
এক্ষেত্রে এটি কোনো সুদ নয় বরং উপহারস্বরূপ।
হাদীস দ্বারা প্রমাণ:
قال النبي ﷺ: إِنَّ خِيَارَكُمْ أَحْسَنُكُمْ قَضَاءً
“তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম সেই ব্যক্তি, যে সবচেয়ে উত্তমভাবে ঋণ পরিশোধ করে।”
— সহীহ বুখারী: হাদীস ২৩৯৩
অন্য হাদীসে এসেছে:
জাবির (রা.) বলেন, রাসূল ﷺ আমাকে আমার পাওনা ফেরত দেন এবং তা থেকে বেশি পরিমাণে দেন।
— সহীহ বুখারী: হাদীস ২৩৯৪
তবে সাবধানতার বিষয়:
বর্তমান সমাজে অনেক জায়গায় এমন রীতি আছে যে:
-
ঋণ দিলে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অতিরিক্ত ফেরত দিতে হয়
-
কিংবা ঋণের বিনিময়ে অতিরিক্ত সুবিধা দিতে হয়
-
কেউ কেউ বলে এটি “নৈতিকতা”
এই ধরনের চর্চা সুদের অন্তর্ভুক্ত, যা স্পষ্টভাবে হারাম।
সাহাবী ফাযালা ইবনে উবায়েদ (রাঃ) বলেন:
“كل قرض جر منفعة فهو ربا”
“যে ঋণ কোনো মুনাফা এনে দেয়, সেটি সুদের একটি প্রকার।”
— (মুস্তাদরাক হাকিম, কিতাবুল বুইউ’)
সারসংক্ষেপ টেবিল:
পরিস্থিতি | বিধান |
---|---|
শর্ত ছাড়া স্বেচ্ছায় অতিরিক্ত দেওয়া | বৈধ |
অতিরিক্ত দেওয়ার শর্ত বা দাবি থাকলে | হারাম (সুদ) |
সামাজিকভাবে বাধ্য করলে | সুদের শামিল |
✅ উপসংহার:
ইসলাম ঋণগ্রহীতাকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে উত্তমভাবে ঋণ পরিশোধ করতে উৎসাহিত করেছে। তবে শর্তযুক্ত বা প্রত্যাশামূলক বাড়তি কিছু দেওয়া হলে তা সুদের আওতায় পড়ে, যা স্পষ্ট হারাম।
আল্লাহ আমাদেরকে সুদের মতো মারাত্মক গুনাহ থেকে হেফাজত করুন এবং ইসলামের অর্থনৈতিক বিধানগুলোকে সঠিকভাবে বুঝে অনুসরণ করার তাওফিক দিন।
آمين يا رب العالمين