বিশুদ্ধ ইসলামিক সমাধান

Fatwaguide.com

জ্ঞান ও ঈমানের মিলনস্থল

কুরবানির বৈধ পশু

কুরবানির বৈধ পশু: ৭টি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত ও শরিক হওয়ার চমৎকার নিয়ম

কুরবানির বৈধ পশু: ৭টি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত ও শরিক হওয়ার চমৎকার নিয়ম এই প্রবন্ধে আমরা জানবো বিস্তারিত আলোচনা তবে এই টা আমাদের হবে প্রথম পর্ব,আমরা নিয়ত করেছি কুরবানীর মাসআলা মাসাইল আমরা 3টি পর্বে বিস্তারিত আলোচনা করবো ইনশা আল্লাহ্ । শুরু করছি আমাদের ১ম পর্ব

 বকুরবানী কার উপর ওয়াজিব?

মাসআলা ১:

যে মুসলমান ব্যক্তি প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থমস্তিষ্কসম্পন্ন এবং যিলহজ্ব মাসের ১০ তারিখ ফজরের সময় থেকে ১২ তারিখ সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ে নেসাব পরিমাণ অতিরিক্ত সম্পদের মালিক হন, তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব হয়। নেসাব পরিমাণ সম্পদ বলতে বোঝায়: সোনা-রূপা, নগদ অর্থ, অলঙ্কার, প্রয়োজনাতিরিক্ত জমি, দ্বিতীয় বাড়ি, ব্যবসার মাল এবং অতিরিক্ত আসবাবপত্র।

নেসাবের পরিমাণ:

  • সোনা: সাড়ে ৭ ভরি (৭.৫ ভরি)

  • রূপা: সাড়ে ৫২ ভরি (৫২.৫ ভরি)

  • অন্যান্য সম্পদ: রূপার নিসাব অনুযায়ী সমপরিমাণ মূল্য।

যদি কারো কাছে আলাদাভাবে কোনো কিছু নেসাব পরিমাণ না থাকে, তবে মিলিতভাবে (যেমন কিছু সোনা ও কিছু টাকা) যদি রূপার নিসাব পরিমাণে পৌঁছে যায়, তাহলে কুরবানী ওয়াজিব হবে।

আল্লাহ তাআলা বলেন:
فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ
“অতএব, আপনার প্রভুর উদ্দেশ্যে নামায পড়ুন ও কুরবানী করুন।”
(সূরা কাউসার : ২)

এছাড়াও আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যে, কুরবানী ওয়াজিব।
(সূত্র: আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৫৫; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৭/৪০৫)


মাসআলা ২: একান্নভুক্ত পরিবারে কুরবানী

যদি এক পরিবারে একাধিক সদস্য নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হন, তবে প্রত্যেকের উপর আলাদা কুরবানী ওয়াজিব হবে। অর্থাৎ এক পশু দ্বারা সকলের কুরবানী আদায় হবে না।


মাসআলা ৩: কুরবানির বৈধ পশু তে নেসাবের মেয়াদ কত দিন

সারা বছর নেসাব থাকার প্রয়োজন নেই। কেবল কুরবানীর তিন দিনের মধ্যে যে কোনো এক সময় নেসাবের মালিক হলে তাতেই কুরবানী ওয়াজিব হয়।
(সূত্র: বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৬, রদ্দুল মুহতার ৬/৩১২)


মাসআলা ৪: নাবালেগ ও অপ্রাপ্তবয়স্ক

যে শিশু বালেগ নয় অথবা মানসিকভাবে সুস্থ নয়, তার উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়, যদিও সে নেসাবের মালিক হয়। তবে অভিভাবক ইচ্ছা করলে নফল কুরবানী করতে পারে।
(সূত্র: বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৬, রদ্দুল মুহতার ৬/৩১৬)


মাসআলা ৫: মুসাফিরের কুরবানী

যদি কেউ কুরবানীর দিনগুলোতে সফরে থাকে (কমপক্ষে ৭৮ কিমি দূরে যাওয়ার নিয়তে), তাহলে তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব নয়।
(সূত্র: ফাতাওয়া কাযীখান ৩/৩৪৪; বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৫; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৫)


মাসআলা ৬: কুরবানির বৈধ পশু তে দরিদ্র ব্যক্তির বিধান

যার নিকট নেসাব পরিমাণ সম্পদ নেই, তার উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়। তবে সে যদি কুরবানীর নিয়তে পশু কিনে ফেলে, তাহলে সেটি জবাই করা তার জন্য আবশ্যক হয়ে যায়।
(সূত্র: বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯২)


কুরবানীর সময়কাল

১০ যিলহজ্ব থেকে ১২ যিলহজ্ব সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময় কুরবানী দেওয়া যায়। এর মধ্যে প্রথম দিন কুরবানী করাই সর্বোত্তম, এরপর দ্বিতীয় দিন, তারপর তৃতীয় দিন।
(সূত্র: বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২৯৫)


হাদীস:

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
“আমরা ঈদের দিন প্রথমে নামায আদায় করি, পরে কুরবানী করি। যে আমাদের নিয়ম অনুসরণ করে, তার কুরবানী সঠিক হয়। আর নামাযের আগেই কুরবানী করলে, তা কেবল মাংস হবে, কুরবানী নয়।”
(সহীহ মুসলিম ২/১৫৪)


মাসআলা ৭: কখন থেকে কুরবানী করা যায়

যেসব স্থানে ঈদ ও জুমার নামায ফরজ, সেখানে ঈদের নামাযের আগে কুরবানী করা জায়েয নয়। তবে যদি ওজরের কারণে নামায আদায় সম্ভব না হয়, তাহলে নামাযের সময় অতিবাহিত হওয়ার পর কুরবানী করা যাবে।
(সূত্র: সহীহ বুখারী ২/৮৩২, সহীহ মুসলিম ২/১৫৪)


মাসআলা ৮: কুরবানির বৈধ পশুরা তে রাতে কুরবানী করা যাবে

১০ ও ১১ তারিখ দিবাগত রাতে কুরবানী করা জায়েয, তবে দিনে করাই উত্তম।
(সূত্র: মাজমাউয যাওয়াইদ ৪/২২; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২০; কাযীখান ৩/৩৪৫)


মাসআলা ৯: সময়মতো কুরবানী না হলে

যদি কেউ কুরবানীর সময় পশু না কিনে থাকে, তাহলে একটি ছাগলের সমমূল্যের টাকা সদকা করতে হবে। আর যদি পশু কিনে থাকেন কিন্তু জবাই না করতে পারেন, তাহলে জীবিত পশুই সদকা করতে হবে।
(সূত্র: বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৪; ফাতাওয়া কাযীখান ৩/৩৪৫)


মাসআলা ১০: সময় শেষে জবাই করলে

যদি কেউ কুরবানীর সময় পার হয়ে যাওয়ার পর পশু জবাই করে ফেলে, তাহলে পুরো মাংস সদকা করতে হবে। এবং যদি জীবিত পশুর মূল্যের তুলনায় গোশতের দাম কম হয়, তবে তফাৎটুকুও সদকা করতে হবে।
(সূত্র: বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০২; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২০–৩২১)


কোন কোন পশু দ্বারা কুরবানী করা বৈধ

মাসআলা ১১:
কুরবানী করার জন্য বৈধ পশুগুলো হলো—উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া এবং দুম্বা। এ ছাড়া অন্য কোনো বন্য পশু যেমন—হরিণ, বন্য গরু, কিংবা হাঁস-মুরগি, কবুতর ইত্যাদি দ্বারা কুরবানী আদায় করা বৈধ নয়। কারণ শরীয়তের দৃষ্টিতে কুরবানী শুধু নির্দিষ্ট গৃহপালিত পশু দ্বারাই হতে পারে।
তথ্যসূত্র: কাযীখান ৩/৩৪৮; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৫

আল্লাহ তাআলা বলেন:

“আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্য কুরবানীর পদ্ধতি নির্ধারণ করেছি, যাতে তারা গৃহপালিত পশু জবাইয়ের সময় আল্লাহর নাম স্মরণ করে”

—সূরা হজ্ব : ৩৪


কুরবানির বৈধ পশু তে পুরুষ বা স্ত্রী পশু

মাসআলা ১২:
গৃহপালিত পশুদের মধ্যে নর এবং মাদার উভয়টিই কুরবানীর জন্য ব্যবহার করা বৈধ।
তথ্যসূত্র: কাযীখান ৩/৩৪৮; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৫


কুরবানীর পশুর ন্যূনতম বয়স

মাসআলা ১৩:

  • উট: কমপক্ষে ৫ বছর

  • গরু ও মহিষ: কমপক্ষে ২ বছর

  • ছাগল ও ভেড়া: কমপক্ষে ১ বছর (তবে ভেড়া বা দুম্বা যদি ৬ মাস পার করে এবং দেখতে এক বছরের মতো লাগে, তবে তা বৈধ)
    ছাগলের ক্ষেত্রে অবশ্যই ১ বছর পূর্ণ হওয়া আবশ্যক, এর কমে কুরবানী বৈধ নয়।

হাদীস:

“তোমরা শুধুমাত্র ‘মুসিন্নাহ’ পশু জবাই করো। তবে যদি তা পাওয়া কঠিন হয়, তাহলে ছয় মাস বয়সী ভেড়া কুরবানী করতে পারো”
—সহীহ মুসলিম, হাদীস: ১৯৬৩


একটি পশুতে কতজন শরীক হতে পারে?

মাসআলা ১৪:

  • ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা: কেবল একজনের পক্ষ থেকে কুরবানী বৈধ।

  • উট, গরু, মহিষ: সর্বোচ্চ ৭ জন পর্যন্ত শরীক হতে পারেন। ৭ জনের বেশি হলে সকলের কুরবানী বাতিল হবে।

হাদীস:

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন—আমরা সাতজন একত্রে উট বা গরুতে কুরবানী করবো”
—সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১২১৮


শরীকদের নিয়তের শুদ্ধতা

মাসআলা ১৫:
যদি শরীকদের মধ্যে কেউ নিছক মাংস পাওয়ার উদ্দেশ্যে শরীক হয় এবং ইবাদতের উদ্দেশ্যে না হয়, তাহলে তার কুরবানী সহীহ হবে না এবং অন্যদের কুরবানীও বাতিল হবে।
তথ্যসূত্র: বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৮; কাযীখান ৩/৩৪৯


আকীকা ও কুরবানির নিয়ম

মাসআলা ১৬:
উট, গরু বা মহিষে কুরবানীর পাশাপাশি আকীকার নিয়তে শরীক হওয়া বৈধ।
ছেলের জন্য দুই ভাগ এবং মেয়ের জন্য এক ভাগ নির্ধারিত। শৈশবে আকীকা না করা হলে বড় বয়সেও করা যাবে। এই গোশত মা-বাবা বা আকীকার জন্য যে ব্যক্তি করছেন, তিনিও খেতে পারবেন।

তথ্যসূত্র:

  • ইলাউস সুনান ১৭/১২৬

  • রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৬

  • হাশিয়াতুত তহতাবী আলাদ্দুর ৪/১১৬


হালাল উপার্জনে কুরবানী

মাসআলা ১৭:
কুরবানীর পশু ক্রয় এবং কুরবানীর খরচ অবশ্যই হালাল উপার্জনের হতে হবে। হারাম টাকা দিয়ে কুরবানী করলে তা গ্রহণযোগ্য নয় এবং অন্য শরীকদের কুরবানীও তাতে বাতিল হয়ে যেতে পারে।
তথ্যসূত্র: বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১০


পশু একার জন্য কিনে পরে শরীক করা

মাসআলা ১৮:

  • যদি কোনো ধনী ব্যক্তি একা কুরবানীর জন্য গরু বা উট ক্রয় করে, তবে পরে অন্যদেরকে শরীক করা বৈধ।

  • গরীব ব্যক্তি (যার উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়) যদি একা পশু কিনে ফেলে তবে সেটি তার পক্ষেই নির্ধারিত হয়ে যায়, পরে কাউকে শরীক করা বৈধ নয়।
    তথ্যসূত্র: কাযীখান ৩/৩৫০–৩৫১; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১০


কুরবানীর জন্য উত্তম পশু

মাসআলা ১৯:
হৃষ্টপুষ্ট, দাগহীন ও সুন্দর পশুই কুরবানীর জন্য উত্তম। আল্লাহর রাস্তায় উৎকৃষ্ট জিনিস উৎসর্গ করাই মর্যাদাপূর্ণ।
তথ্যসূত্র: মুসনাদে আহমদ ৬/১৩৬; আলমগীরী ৫/৩০০; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৩

এভাবে কুরবানীর কুরবানির বৈধ পশু সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ মাসআলা ও মাসায়েলগুলো জানা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য জরুরি, যাতে তারা সঠিকভাবে কুরবানীর হুকুম বাস্তবায়ন করতে পারে।

কুরবানি সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানার জন্য ক্লিক করুন

আমাদের সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানার জন্য ক্লিক করুন

ইসলামিক যে কোন প্রশ্ন করতে ক্লিক করুন


Table of Contents

freelnacer rayhan ali

হাঃ মাওঃ মোঃ আবু রায়হান

Digital Marketer, WordPress, E-commence and Shopify expert

If you need any type wordpress website just contact me

Recent Post

কুরবানী করার পদ্ধতি
fatwaguide
কুরবানীর ইতিহাস
fatwaguide
টিকটিকি মারা
fatwaguide
কুরবানীর পশু
fatwaguide
কুরবানীর পশু
fatwaguide
কুরবানির বৈধ পশু
fatwaguide

ব্লগ ক্যাটাগরি

বিষয়ভিত্তিক পিডিএফ কিতাব

প্রশ্ন করুন

যে কোন ইসলামিক বিষয়ে সমাধান পেতে প্রশ্ন করুন fatwaguide এই ওয়েব সাইটে,

আপনার যে কোন ইসলামিক প্রশ্ন করার জন্য ক্লিক করুন 👇👇👇