কুরবানি ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত, যা মুসলিমদের জন্য অন্যতম শ্রেষ্ঠ আমল হিসেবে বিবেচিত। এটি ইবরাহিম (আলাইহিস সালাম)-এর স্মরণে প্রতিষ্ঠিত এক মহান সুন্নাহ, যা আত্মত্যাগ ও আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের প্রতীক। কুরআন ও হাদীসের নির্দেশনায় কুরবানির গুরুত্ব সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে।
কুরআনে কুরবানির গুরুত্ব
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেন:
“তুমি তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে নামাজ কায়েম করো এবং কুরবানি করো।”
— (সূরা আল-কাওসার, ১০৮:২)
এ আয়াতে কুরবানি করার নির্দেশ এসেছে, যা ইবাদত ও আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আরও বলেছেন:
“তাদের গোশত ও রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না; বরং তাঁর কাছে পৌঁছে তোমাদের তাকওয়া।”
— (সূরা আল-হাজ্জ, ২২:৩৭)
এখানে পরিষ্কার বলা হয়েছে যে, কুরবানির মাধ্যমে মূল উদ্দেশ্য আল্লাহর জন্য একনিষ্ঠতা ও তাকওয়া অর্জন।
হাদীসে কুরবানির গুরুত্ব
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:
“আদম সন্তানের কোনো কাজ কুরবানির দিনে আল্লাহর কাছে পশু জবেহ করার চেয়ে অধিক প্রিয় নয়। কিয়ামতের দিন কুরবানির পশু তার শিং, লোম ও খুরসহ উপস্থিত করা হবে। রক্ত ঝরার আগেই তা আল্লাহর কাছে গ্রহণ করা হয়। অতএব খুশি মনে কুরবানি করো।”
— (সুনান তিরমিজি, হাদীস: ১৪৯৩)
আরও বলেছেন:
“যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কুরবানি করে না, সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে।”
— (সুনান ইবনে মাজাহ, হাদীস: ৩১২৩)
এই হাদীসগুলো কুরবানির অপরিহার্যতা ও আল্লাহর নিকট এর অগ্রাধিকার তুলে ধরে।
কুরবানির ফজিলত
-
আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের শ্রেষ্ঠ মাধ্যম।
-
কিয়ামতের দিন কুরবানির পশুর প্রতিটি অঙ্গের বিনিময়ে নাজাত লাভ।
-
আত্মত্যাগ, ধৈর্য ও আল্লাহর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ।
-
গরিব-মিসকিনদের খাদ্যের ব্যবস্থা করা ও সামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠা করা।
কুরবানির জন্য দোয়া
কুরবানির সময় এই দোয়া পড়া উত্তম:
“বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার, আল্লাহুম্মা মিনকা ওয়া লাকা।”
অর্থ:
“আল্লাহর নামে, আল্লাহ মহান। হে আল্লাহ! এটি তোমার পক্ষ থেকে এবং তোমার জন্যই।”
(তিরমিজি, হাদীস: ১৫২১)
উপসংহার
কুরবানি ইবাদতের এমন একটি রূপ যা আল্লাহর প্রতি একনিষ্ঠতা ও আত্মত্যাগের অনুপম প্রকাশ। আমাদের উচিত কুরআন ও হাদীসের নির্দেশনা অনুযায়ী খাঁটি মনোভাব নিয়ে কুরবানি আদায় করা, যাতে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পরকালের নাজাত লাভ করতে পারি।