কুরবানীর ইতিহাস: ইসলামের আলোকে
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
আজকে আমরা জানব ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত কুরবানীর ইতিহাস ও শিক্ষা সম্পর্কে। এই ইবাদতটি ইসলামে অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ এবং মহান ত্যাগের প্রতীক।
পৃথিবীতে প্রথম কুরবানীর ইতিহাস: হাবীল ও কাবীলের ঘটনা
কুরবানীর ইতিহাস সম্পর্কে জানার জন্য আমাদের ইসলামের প্রাচীন ইতিহাসের দিকে তাকাতে হবে। সর্বপ্রথম কুরবানীর ঘটনা ঘটেছিল হযরত আদম (আঃ) এর সন্তান হাবীল ও কাবীলের মধ্যে।
তাদের সময়ে পৃথিবীতে খুব কম মানুষ ছিল। আল্লাহ আদম (আঃ)-কে আদেশ দিয়েছিলেন, তার সন্তানদের জোড়ায় জোড়ায় জন্ম দিতে। পরবর্তীতে তাদের মধ্যেই বিবাহ সম্পাদিত হতো। এক পর্যায়ে হাবীল ও কাবীল বিবাহের উপযুক্ত হলে সমস্যা তৈরি হয়। কারণ, কাবীল তার বোনের সাথে বিবাহ করতে চায়, যা শারঈ দিক থেকে বৈধ ছিল না।
অতএব, হযরত আদম (আঃ) তাদেরকে কুরবানী করার নির্দেশ দেন। যার কুরবানী আল্লাহ কবুল করবেন, তার সাথে বিবাহ হবে।
কুরআনের বর্ণনা
وَاتْلُ عَلَيْهِمْ نَبَأَ ابْنَيْ آدَمَ بِالْحَقِّ…
(সূরা মায়েদা: ২৭-২৮)
হাবীল তার সবচেয়ে উত্তম পশু কুরবানী করলো। অন্যদিকে, কাবীল তার জমির সাধারণ ফসল থেকে কিছু কুরবানী করলো। ফলে, আল্লাহ হাবীলের কুরবানী কবুল করলেন এবং কাবীলেরটি গ্রহণ করলেন না। এটাই ছিল পৃথিবীর সর্বপ্রথম কুরবানীর ঘটনা।
ইব্রাহিম (আঃ)-এর কুরবানীর ইতিহাস
এরপর আমরা যার অনুসরণে কুরবানী করি, তিনি হচ্ছেন হযরত ইব্রাহিম (আঃ)। তার জীবনে অনেক পরীক্ষার মধ্যে অন্যতম ছিল পুত্র ইসমাইল (আঃ)-কে কুরবানীর নির্দেশ।
সন্তানের জন্য দোয়া
رَبِّ هَبْ لِيْ مِنَ الصّٰلِحِيْنَ
“হে আমার রব! আমাকে নেক সন্তান দান করুন।”
(সূরা সাফফাত: ১০০)
আল্লাহ তায়ালা ৮৬ বছর বয়সে তাঁকে পুত্র ইসমাইল (আঃ) দান করেন। পরে আল্লাহর আদেশে তিনি স্ত্রী হাজেরা (আঃ) ও পুত্রকে মক্কার নির্জন স্থানে রেখে যান। এরপর একদিন স্বপ্নে দেখেন, ইসমাইল (আঃ)-কে কুরবানী করছেন।
সন্তানের আনুগত্য
يٰبُنَيَّ اِنِّيْۤ اَرٰي فِي الْمَنَامِ اَنِّيْۤ اَذْبَحُكَ…
يٰۤاَبَتِ افْعَلْ مَا تُؤْمَرُ…
(সূরা সাফফাত: ১০২)
ইসমাইল (আঃ) বলেন, “আপনি যা আদেশ পেয়েছেন, তা পালন করুন। ইনশাআল্লাহ আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের মধ্যে পাবেন।”
অবশেষে ইব্রাহিম (আঃ) কুরবানী করার সময় ছুরি চালানোর পূর্বেই আল্লাহ তাদের পরীক্ষা গ্রহণ করেন এবং ইসমাইল (আঃ)-এর পরিবর্তে একটি পশু পাঠিয়ে দেন। এভাবেই কুরবানীর সুন্নত প্রতিষ্ঠিত হয়।
কুরবানীর ইতিহাস থেকে আমাদের শিক্ষা
আল্লাহ বলেন:
لَنْ يَنَالَ اللّٰهَ لُحُوْمُهَا وَلَا دِمَاؤُهَا وَلٰكِنْ يَنَالُهُ التَّقْوٰى مِنْكُمْ…
“আল্লাহর কাছে পৌঁছে না পশুর মাংস বা রক্ত, বরং পৌঁছে তোমাদের তাকওয়া।”
(সূরা হজ্জ: ৩৭)
এ থেকে আমরা কিছু গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা পাই:
আল্লাহর নির্দেশে আত্মসমর্পণ
ত্যাগের শিক্ষা
তাকওয়া অর্জনের মাধ্যম
আল্লাহর সন্তুষ্টিই চূড়ান্ত উদ্দেশ্য
গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ
যদি আপনি কুরবানী করতে চান, তাহলে অবশ্যই কুরবানীর মাসআলা ও মাসাইল জানা উচিত।
কুরবানীর গুরুত্বপূর্ণ মাসআলা জানতে এখানে ক্লিক করুন
আমাদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন
ইসলামিক যেকোনো প্রশ্ন করতে এখানে ক্লিক করুন
والله أعلم بالصواب