কুরবানীর পশু: গোশত বণ্টন, বিক্রয় ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ মাসআলা
কুরবানীর গোশত বণ্টনের নিয়ম
মাসআলা ৪০: যদি কেউ শরীকভাবে কুরবানী করে, তাহলে কুরবানীর পশুর গোশত ওজন করে সমানভাবে বণ্টন করতে হবে। শুধু অনুমানের ভিত্তিতে ভাগ করা জায়েয নয়।
আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৭, কাযীখান ৩/৩৫১
মাসআলা ৪১: কুরবানীর গোশতের এক-তৃতীয়াংশ গরীব ও মিসকীনদের, এক-তৃতীয়াংশ আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের দেওয়া উত্তম। তবে গোশতের পুরোটাই নিজের জন্য রেখে দেওয়া নাজায়েয নয়।
বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৪, আলমগীরী ৫/৩০০
কুরবানীর গোশত ও চামড়া বিক্রয় সংক্রান্ত মাসআলা
মাসআলা ৪২: কুরবানীর গোশত, চর্বি ইত্যাদি বিক্রি করা জায়েয নয়। বিক্রি করলে এর অর্থ সদকা করতে হবে।
ইলাউস সুনান ১৭/২৫৯, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৫, কাযীখান ৩/৩৫৪, আলমগীরী ৫/৩০১
মাসআলা ৪৩: কসাই বা জবাইকারীর পারিশ্রমিক হিসেবে কুরবানীর গোশত বা চামড়া দেওয়া জায়েয নয়। নির্ধারিত পারিশ্রমিকের বাইরে অতিরিক্ত হাদিয়া স্বরূপ দিলে তা জায়েয হবে।
আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২৮
মাসআলা ৬০-৬১: কুরবানীর চামড়া নিজে ব্যবহার করা যায়। বিক্রি করলে প্রাপ্ত অর্থ সম্পূর্ণ সদকা করা জরুরি। বিক্রির পূর্বে সদকার নিয়ত করা আবশ্যক, অন্যথায় তা গুনাহ হবে।
আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২৮, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩০১, কাযীখান ৩/৩৫৪
মাসআলা ৬৫: কুরবানীর পশুর হাড় বিক্রি করাও জায়েয নয়। বিক্রি করলে এর অর্থও সদকা করতে হবে।
বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৫, কাযীখান ৩/৩৫৪, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩০১
জবাই সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ মাসআলা
মাসআলা ৪৪: ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুরবানীর পশু জবাই করা উত্তম।
বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৩
মাসআলা ৪৫: পশু নিস্তেজ হওয়ার আগেই চামড়া খোলা বা কোনো অঙ্গ কাটা মাকরূহ।
বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৩; আদ্দুররুল মুখতার ৬/২৯৬
মাসআলা ৪৬: কোনো পশুকে অন্য পশুর সামনে জবাই করা উচিত নয়। এছাড়া পশুকে অপ্রয়োজনীয় কষ্ট দেওয়াও হারাম।
মাসআলা ৬৬: রাতে কুরবানী করা জায়েয হলেও আলো স্বল্পতার কারণে এটি অনুত্তম। তবে পর্যাপ্ত আলো থাকলে সমস্যা নেই।
ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩৪৫, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২০, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২৯৬, আহসানুল ফাতাওয়া ৭/৫১০
কুরবানীর গোশত কারা খেতে পারবে?
মাসআলা ৪৭: কুরবানীর গোশত বিধর্মীদের (যেমন হিন্দু) দেওয়া জায়েয।
ইলাউস সুনান ৭/২৮৩, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩০০
মাসআলা ৫১: কুরবানীদাতার জন্য নিজের কুরবানীর গোশত খাওয়া মুস্তাহাব।
সূরা হজ্ব ২৮, সহীহ মুসলিম ২২/১৫৯, মুসনাদে আহমদ ৯০৭৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৪
মাসআলা ৬৪: ঈদের দিন প্রথম আহার কুরবানীর গোশত দিয়ে শুরু করা সুন্নত।
জামে তিরমিযী ১/১২০, শরহুল মুনয়া ৫৬৬, আদ্দুররুল মুখতার ২/১৭৬, আলবাহরুর রায়েক ২/১৬৩
মাসআলা ৬৭: ঘরের অন্য সদস্যদের মতো কাজের লোকদেরও কুরবানীর গোশত খাওয়ানো জায়েয, কিন্তু পারিশ্রমিক হিসেবে দেওয়া জায়েয নয়।
আহকামুল কুরআন জাস্সাস ৩/২৩৭, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৪
কুরবানীর ওয়াজিব হওয়া ও আদায় সংক্রান্ত মাসআলা
মাসআলা ৪৮: অন্যের পক্ষ থেকে ওয়াজিব কুরবানী আদায় করতে হলে তার অনুমতি নিতে হবে। স্ত্রী-সন্তানের ক্ষেত্রে রেওয়াজ থাকলে অনুমতি ছাড়াও আদায় হয়ে যাবে।
বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১১
মাসআলা ৪৯: কুরবানীর পশু চুরি হয়ে গেলে বা মারা গেলে আরেকটি পশু কুরবানী করা আবশ্যক (যদি কুরবানী ওয়াজিব হয়ে থাকে)।
বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৬, খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩১৯
মাসআলা ৫২: ঋণ নিয়ে কুরবানী করলেও তা আদায় হবে, তবে সুদী ঋণ গ্রহণ করে কুরবানী করা হারাম।
মাসআলা ৫৩: হাজী যদি কুরবানীর দিনগুলোতে মুকীম হন এবং সামর্থ্যবান হন, তাহলে তাদের উপর কুরবানী ওয়াজিব হবে।
ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২৯৩, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৫, বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৫, ইমদাদুল ফাতাওয়া ২/১৬৬
মাসআলা ৫৫: কুরবানীর জন্য ১০ যিলহজ্ব সর্বোত্তম দিন, এরপর ১১ ও পরে ১২ তারিখ।
রদ্দুল মুহতার ৬/৩১৬
মাসআলা ৬২: কুরবানীর সময়ের প্রথমে মুসাফির ছিল কিন্তু ৩য় দিনে মুকীম হলে তার উপর কুরবানী ওয়াজিব হবে।
বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৬, ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩৪৬
অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ মাসআলা
মাসআলা ৫৪: সামর্থ্যবান মুসলিমদের জন্য রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর পক্ষ থেকেও কুরবানী করা উত্তম ও ফযীলতপূর্ণ।
সুনানে আবু দাউদ ২/২৯, জামে তিরমিযী ১/২৭৫
মাসআলা ৫৬: খাসীকৃত ছাগল দ্বারা কুরবানী জায়েয; কখনো কখনো এটি উত্তমও হতে পারে।
ফাতহুল কাদীর ৮/৪৯৮, মাজমাউল আনহুর ৪/২২৪
মাসআলা ৫৭: জীবিত ব্যক্তির পক্ষ থেকেও নফল কুরবানী করা জায়েয, যেমন মৃতের ঈসালে সওয়াবের জন্য করা হয়।
রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৬
মাসআলা ৫৮-৫৯: বিদেশে অবস্থানরত ব্যক্তি তার দেশে কুরবানী করতে পারেন। পশু যেখানে থাকবে, সেই এলাকার ঈদ জামাতের পরই জবাই করা যাবে।
আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৮
মাসআলা ৬৩: হজ্বের কুরবানী, আকীকা এবং সাধারণ কুরবানী এক পশুতে নিয়ত করা জায়েয, তবে হেরেম এলাকায় জবাই আবশ্যক।
বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৯, রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৬
মাসআলা ৬৮: জবাইকারীর পারিশ্রমিক কুরবানীর পশুর অংশ দিয়ে দেওয়া যাবে না, বরং নগদ দিতে হবে।
কিফায়াতুল মুফতী ৮/২৬৫
মাসআলা ৬৯: ঈদের দিনে মোরগ জবাই করা নিষেধ নয়, তবে কুরবানীর নিয়তে করলে তা না-জায়েয হবে।
খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩১৪, ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৬/২৯০
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে কুরবানীর সকল মাস-আলা জেনে আমাল করার তাওফিক দান করেন .
আপনে যদি কুরবানী করেন তাহলে অবশ্যই আপনার উচিত কুরবানীর মাস-আলা আরো ২টি পর্ব দেখে নেওয়া
১ম পর্ব পড়তে ক্লিক করুন
২য় পর্ব পড়তে ক্লিক করুন
আমাদের সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানার জন্য ক্লিক করুন