গর্ভবতী নারীদের জন্য যেই ১০টি কাজ করবেন
সন্তান যখন মায়ের গর্ভে থাকে, তখন থেকেই মায়ের যাবতীয় চাল-চলন ও গতি-বিধির বিস্তার প্রভাব সন্তানের উপর পড়ে, আবার যেহেতু অপরদিকে গর্ভ অবস্থাই শুরু হয় মায়ের অনেক কষ্ট, কুরআনের ভাষায় আল্লাহ তাআলা বলেন:
“হামালাতহু উম্মুহু” — তাঁর মা তাকে কষ্টের পর কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করেছে।
এহেন কষ্টের ফসল যদি সন্তানের সৎচরিত্র ও নেক আমল না হয়, তবে মায়েরা পরবর্তীতে আফসোস করে বলেন: “ওকে গর্ভে ধারণ করে ভুল করেছি!” এমন আফসোস যেন কারও জীবনে না আসে—এই লক্ষ্যে গর্ভবতী নারীদের জন্য আল্লাহওয়ালাদের পরামর্শ অনুযায়ী নিচে 10 টি দিকনির্দেশনা তুলে ধরা হলো:
✅ ১. গোনাহ থেকে বিরত থাকুন
প্রিয় গর্ভবতী মা, অতিরিক্ত ইবাদতের চাইতে গোনাহ ত্যাগ করাই হবে আপনার বুদ্ধিমত্তার পরিচয়. নাটক, সিরিয়াল, অপ্রয়োজনীয় আড্ডা ও কণ্ঠস্বর বর্জন করুন, ঘর থেকে অপ্রয়োজনে বের হবেন না।
“ইন্না মা‘আল ‘উসরি ইউসরা” — কষ্টের সাথেই রয়েছে স্বস্তি (সূরা ইনশিরাহ ৬)
“আপনার যে সকল গায়ের এ মাহারাম আত্মীয় রয়েছে তাদেরকে আপনার সাথে দেখা সাক্ষাতের কিংবা পর্দা লঙ্ঘনের জন্য অনুমতি দেবেন না।এভাবে চলতে পারলে পবিত্র কোরআনের সুসংবাদ গ্রহণ করুন إنَّ مَعَ العُسْرِ يُسْراً— কষ্টের সাথেই আছে সুখ। (সূরা আলাম-নাশরাহ: ৬)
✅ ২. ধৈর্য ধারণ করুন
অসুস্থতা, বমি বমি ভাব, দুর্বলতা প্রভৃতি কারণে ধৈর্যহারা হবেন না, এ ভাবে ভাবুন এই সময়টার প্রতিটি মুহূর্ত আপনার জন্য জিহাদ তুলল এবাদত এতে ধৈর্যধারণ করা আপনার জন্য সহজ হবে, আপনার কষ্ট শক্তিতে পরিণত হবে নবীজী ﷺ চমৎকার বলেছেন, الصَّبْرُ ضِيَاءٌ সবর হল জ্যোতি। (মুসলিম: ২২৩)
✅ ৩. সময় মতো নামাজ আদায় করুন
নিয়মিত নামাজ মানসিক প্রশান্তি এনে দেয়, এজন্যই নামাজের সময় হলে নবীজী ﷺ বেলাল রাযি.কে বলতেন, أَقِمِ الصَّلاةَ، أَرِحْنا بِهَا নামাজের ব্যবস্থা কর এবং তার মাধ্যমে আমাকে তৃপ্ত কর। (আবু দাউদ: ৪৩৩৩)
✅ ৪. প্রচুর পরিমাণ জিকির করুন
প্রচুর পরিমাণ জিকির করুন কারন জিকির অস্থিরতা দূরকরণে কোরআনই ব্যবস্থা এটি, এটি আপনাকে ও আপনার গর্ভের সন্তানকে শান্ত রাখতে সহায়ক হবে, আল্লাহ তা আলা বলেন
“الَّذِينَ آَمَنُوا وَتَطْمَئِنُّ قُلُوبُهُمْ بِذِكْرِ اللَّهِ أَلَا بِذِكْرِ اللَّهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ
যারা ঈমান আনে এবং আল্লাহর স্মরণে যাদের মন প্রশান্ত হয় ; জেনে রাখ, আল্লাহর স্মরণেই মন প্রশান্ত হয়। (সূরা রাদ : ২৮)
✅ ৫. শুকর আদায় করুন
পাঁচ নাম্বার প্রচুর পরিমাণ শুকুর আদায় করতে হবে, দেখুন মা হওয়ার মাঝেই নারীর জন্মের সার্থকতা, কত নারী এমন আছে গর্ভবতী হওয়ার জন্য বছরের পর বছর ধরে চেষ্টা করছে, কিন্তু তাদের ভাগ্যে এই নিয়ামত জুটছে না, এজন্য যখনই মা হওয়ার আনন্দে পুলকিত হবেন, তখনই আল্লাহর শুকুর আদায় করুন। আল্লাহতালা বলে
“وَٱشْكُرُواْ لِى وَلَا تَكْفُرُونِ আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর; অকৃতজ্ঞ হয়ো না। (সূরা বাকারা: ১৫২)
✅ ৬. রাতে দেরি করে না ঘুমানো
বেশি রাত পর্যন্ত জাগ্রত থাকা থেকে বিরত থাকুন, গর্ব অবস্থায় রাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম না হলে স্বাস্থ্যহানি ঘটে, তািই ইশারের নামাজের সময়ের শুরুতেই পড়ে নিন, তারপর প্রয়োজনীয় কাজ সেরে যত দ্রুত সম্ভব ঘুমিয়ে পড়ুন, দেরি করে ঘুমাতে যাবেন না, এতটা আগে রাতের বিছানায় যেতে হবে যাতে করে কমপক্ষে ছয় ঘণ্টা ঘুম নিশ্চিত নিশ্চিন্তে যাওয়া যায় এবং ফজর যথাসময়ে পড়া যায় ।
“আল্লাহ তাআলা বলেন, وَجَعَلْنَا نَوْمَكُمْ سُبَاتًا আর আমি তোমাদের নিদ্রাকে করেছি ক্লান্তি দূরকারী। (সূরা নাবা: ৯)
✅ ৭. ওজু অবস্থায় থাকার চেষ্টা করুন
বিশেষ করে ঘুমানোর আগে ওজু করে নিন, এতে অনিদ্রা দূর হবে ও বরকত আসবে।
নবীজি বলেন: “ইদা আতাইতা মাজি‘আকা ফাতা ওয়াড্দা’ উযু’আকা লিস সালাহ” — ঘুমাতে যাওয়ার সময় সালাতের ওজুর মতো ওজু করো।
✅ ৮. সন্তানের জন্য কোরআন তেলাওয়াত করুন
সন্তানের জন্য কোরআন তেলাওয়াত করুন, প্রায় 20 তম সপ্তাহে গর্বের বাচ্চা শোনার সক্ষমতা অর্জন করে, মা প্রতিদিন কিছু কোরআন তেলাওয়াত করে বাচ্চার মাঝেও কোরআনের মাঝে সম্পর্ক জুড়ে দেওয়ার এটাই উপযুক্ত সময়, আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়া আল্লাহ বলেন, কোরানের বিষয়ে তোমাদের উপর অবশ্যই পালনীয় এই যে কোরআন শিক্ষা করা এবং তোমাদের সন্তানদের উপর শিক্ষা দেওয়া, কেননা এই বিষয়ে তোমাদের জিজ্ঞাসা করা হবে এবং তার প্রতিদানও দেওয়া হবে
ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন: “তোমরা কোরআন শিক্ষা করো এবং তোমাদের সন্তানদেরও শেখাও।”
সুনির্দিষ্ট সূরার তালিকা:
১ম মাস: সূরা আলে ইমরান (পড়লে সন্তান দামী হবে)
২য় মাস: সূরা ইউসুফ (পড়লে সন্তান সুন্দর হবে।)
৩য় মাস: সূরা মারইয়াম (পড়লে সন্তান সহিষ্ণু হবে।)
৪র্থ মাস: সূরা লোকমান (পড়লে সন্তান বুদ্ধিমান হবে।)
৫ম মাস: সূরা মুহাম্মদ (পড়লে সন্তান চরিত্রবান হবে।)
৬ষ্ঠ মাস: সূরা ইয়াসিন (পড়লে সন্তান জ্ঞানী হবে।)
৭ম-১০ম মাস: সূরা ইউসুফ, মুহাম্মদ, ইব্রাহিম ।
ব্যথা উঠলে: সূরা ইনশিকাক পড়ে পানিতে ফুক দিয়ে পান করলে ব্যথা কমে যাবে।
ঘুমের আগে: চার কুল (সূরা কাফিরুন, ইখলাস, ফালাক, নাস) পড়বে অবশ্যই ।
✅ ৯. দোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন
গর্ভকালীন সময়ে মাঝে মাঝে অসহায় বোধ হয় এমনও মনে হয় না জানি এবার আমি মরে যাব কিনা, তাই গর্ভকালীন সময়ে দুয়ার বেশি লিপ্ত হতে হয়, কেননা এ সময় দোয়া আল্লাহ তা আলা কবুল করেন।
“ আল্লাহ বলেন,أَمَّن يُجِيبُ الْمُضْطَرَّ إِذَا دَعَاهُ وَيَكْشِفُ السُّوءَ বলো তো কে নিঃসহায়ের ডাকে সাড়া দেন যখন সে ডাকে এবং কষ্ট দূরীভূত করেন। (সুরা নামল ৬২)
✅ ১০. আল্লাহর দুটি নাম বেশি করে পড়ুন
আল্লাহর এই দুইটি গুণবাচক নাম পড়ুন কোন গর্ভবতী মহিলা যদি আল্লাহ তাআলার কোনবাচক নাম পরতে থাকে, তবে ওই মহিলা তাঁর গর্ভকালীন কষ্টক্রেশ থেকে মুক্তি পায়
আল-মুতা’আলি (ٱلْمُتَعَالِ)
এবং (اَلْمُبْدِئُ) ‘আল-মুবদিয়ু’
উপসংহার:
উপরোক্ত দশটি পরামর্শ গর্ভবতী নারীদের জন্য অত্যন্ত উপকারী ও আমলযোগ্য। এগুলো মেনে চললে মা যেমন আল্লাহর প্রিয় বান্দী হয়ে উঠবেন, তেমনি তাঁর গর্ভের সন্তানও নেক ও সৎ হবে ইনশাআল্লাহ।
এই সমপর্কে আরো বিস্তারিত ভিডিও সহ জানার জন্য জিজিট করুন আমাদের ইউটুব চ্যানেলে
অতিরিক্ত পড়ুন:
আমাদের সাথে থাকুন:
আপনার ইসলামিক প্রশ্ন পাঠান এখানে ক্লিক করুন
আমাদের সম্পর্কে জানুন এখানে ক্লিক করুন
والله أعلم بالصواب