কুরবানী করার পদ্ধতি ও নিয়ম | দলীলসহ বিস্তারিত আলোচনা করা হলো
কুরবানী কী?
কুরবানী (قربانی) অর্থ: নৈকট্য অর্জনের উদ্দেশ্যে কোনো বস্তু উৎসর্গ করা। শরীয়তের পরিভাষায়, নির্ধারিত সময়ে নির্দিষ্ট শর্তযুক্ত পশু আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে যবেহ করাকে কুরবানী বলা হয়।
দলীল:
رسول الله ﷺ বলেছেন,
«مَا عَمِلَ آدَمِيٌّ مِنْ عَمَلٍ يَوْمَ النَّحْرِ أَحَبَّ إِلَى اللهِ مِنْ إِهْرَاقِ الدَّمِ…»
“নহরের (১০ জিলহজ) দিনে মানুষের আমলগুলোর মধ্যে আল্লাহর নিকট সর্বাধিক প্রিয় আমল হলো কুরবানীর পশুর রক্ত ঝরানো।”
— [তিরমিযী: ১৪৯৩]
কুরবানীর নির্ধারিত সময়
শুরু: ঈদুল আযহার নামাযের পর থেকে
শেষ: ১২ জিলহজ সূর্যাস্তের আগে পর্যন্ত (মোট ৩ দিন: ১০, ১১, ১২ জিলহজ)
দলীল:
رسول الله ﷺ বলেছেন,
«إِنَّ أَوَّلَ مَا نَبْدَأُ بِهِ فِي يَوْمِنَا هَذَا أَنْ نُصَلِّيَ، ثُمَّ نَرْجِعَ فَنَنْحَرَ…»
“এই দিনে (১০ জিলহজ) আমরা প্রথমে নামাজ আদায় করব, তারপর কুরবানী করব।”
— [বুখারী: ৫৫৪৫]
✅ কুরবানী করার পদ্ধতি (ধাপে ধাপে)
১. নিয়ত করা
কুরবানীর পশু যবেহ করার আগে মনে মনে বা মুখে উচ্চারণ করে নিয়ত করতে হবে।
উদাহরণ:
“আল্লাহর নামে কুরবানী করছি” বা “ইয়া আল্লাহ, তোমার সন্তুষ্টির জন্য এই কুরবানী করছি।”
২. পশুকে দয়া ও মমতার সাথে আচরণ
কুরবানীর পশুকে খাওয়ানো ও পানি পান করানো
ছুরি ধারালো করা
পশুকে অন্য পশুর সামনে যবেহ না করা
দলীল:
النبي ﷺ বলেন,
«إِنَّ اللهَ كَتَبَ الإِحْسَانَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ… وَلْيُرِحْ ذَبِيحَتَهُ»
“আল্লাহ সব কিছুর উপর উত্তম ব্যবহার ফরজ করেছেন… আর যার যবেহ করবে, সে যেন পশুকে আরাম দেয়।”
— [মুসলিম: ১৯৫৫]
৩. বিসমিল্লাহ বলে যবেহ করা
যবেহ করার সময় উচ্চস্বরে বলা উত্তম:
“بِسْمِ اللهِ، اللهُ أَكْبَرُ”
দলীল:
قوله تعالى:
«فَكُلُوا مِمَّا ذُكِرَ اسْمُ اللهِ عَلَيْهِ…»
“তোমরা সে সব থেকে খাও যা আল্লাহর নাম নিয়ে যবেহ করা হয়েছে।”
— [সূরা আনআম: ১১৮]
৪. সঠিকভাবে ছুরি চালানো
গলা, কণ্ঠনালী ও খাদ্যনালী কেটে দিতে হবে।
পশু যাতে কষ্ট না পায়, সেদিকে খেয়াল রাখা জরুরি।
৫. পশুর দেহ সম্পূর্ণ নিস্তেজ হওয়ার পর চামড়া ছাড়ানো
চামড়া ছাড়ানো বা কাটাকাটি তখনই শুরু করতে হবে, যখন প্রাণ সম্পূর্ণ বের হয়ে যাবে।
কুরবানীর গোশত বণ্টনের নিয়ম
কুরবানীর গোশত তিন ভাগে বণ্টন করা উত্তম:
নিজের পরিবার
আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধব
গরীব-মিসকিন
দলীল:
قوله تعالى:
«فَكُلُوا مِنْهَا وَأَطْعِمُوا الْبَائِسَ الْفَقِيرَ»
“তোমরা নিজেরা খাও এবং অভাবগ্রস্তদেরকে খাওয়াও।”
— [সূরা হজ্জ: ২৮]
⚠️ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা
ঈদের নামাজের আগে কুরবানী করলে তা শুদ্ধ হবে না।
কুরবানীর চামড়া বিক্রি করে নিজের জন্য খরচ করা যাবে না।
কুরবানীর কোনো অংশ বিক্রি করে অর্থ গ্রহণ করা বৈধ নয়।
দলীল:
رسول الله ﷺ বলেন,
«مَنْ ذَبَحَ قَبْلَ أَنْ يُصَلِّيَ فَلْيُعِدْ مَكَانَهَا أُخْرَى»
“যে ঈদের নামাযের আগে কুরবানী করে ফেলেছে, সে যেন অন্য একটি কুরবানী করে।”
— [বুখারী: ৫৫৪৫]কুরবানী করার পদ্ধতি ও মাসআলা বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন
কুরবানী সম্পর্কে যে কোন প্রশ্ন করতে ক্লিক করুন
আমাদের সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানার জন্য ক্লিক করুন
কুরবানী করার পদ্ধতি এই প্রবন্ধটি যদি আপনাদের ভালোলাগে অবশ্যই শেয়ার করতে ভুলবেন না
والله اعلم بالصواب